আশুরার দিনের ঘটনা। আশুরার রোজা কয়টি। আশুরা অর্থ কি। ১০ই মহরম এর ইতিহাস।

আশুরার দিনের ঘটনা।  আশুরার রোজা কয়টি। আশুরা অর্থ কি।  ১০ই মহরম এর ইতিহাস।

আসসালামু আলাইকুম। আজকের টপিক আশুরার দিনের ঘটনা।  আশুরার রোজা কয়টি। আশুরা অর্থ কি।  ১০ই মহরম এর ইতিহাস।   ১০ই মহরম তথা আশুরার দিনে মুসলিম ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অনেক স্মরণীয় ঘটনা রয়েছে যেগুলো দশই মহরম ঘটেছে। মুসলিম মানুষদের জন্য এই দিনটি অত্যন্ত স্মরণীয়। আজকে আমরা  ১০ ই মহরম কি কি ঘটনা ঘটেছে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা গুলো শেয়ার করব। ১০ ই মহরম নিয়ে আমাদের কিছু ভুল ধারনা রয়েছে সেগুলো ও শেয়ার করব। 

আশুরার দিনের সকল ঘটনা। ১০ই মহরম এর ইতিহাস। 

১. আকাশ জমিন পাহাড়-পর্বত সব কিছু সৃষ্টি করা হয়েছিল এই দিনে। 

২. আদম (আ.)-এর সৃষ্টি করা হয়েছিল ১০ ই মহরম এর দিনে । 

৩. নূহ (আ.) মহাপ্লাবন তথা বন্যা শেষে জুদি পাহাড়ে অবতরণ করা হয়েছিল আশুরার দিনে। 

৪. হজরত ইবরাহিম (আ.) নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তিলাভ করেছে।

৫.হজরত আইয়ুব (আ.)-এর দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তিলাভ হয়েছিল এই দিনে। 

৬. হজরত সুলাইমান (আ.)কে পৃথিবীর রাজত্ব দান। সুলাইমান (আ.) গোটা পৃথিবীর রাজত্ব পান। 

৭. হজরত ইউনুস (আ.)কে ৪০ দিন পর মাছের পেট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এই আশুরার দিনে। 

৮. হজরত মূসা (আ.) ফেরাউনের কবল থেকে মুক্তি। সে তার ঘোটা দল দিয়ে মুক্তি লাভ করে। 

৯. হজরত ঈসা (আ.)- এর পৃথিবীতে আগমন এবং জীবতাবস্থায় আসমানে উত্তোলন করা হয়েছিল আশুরার দিনে। 

১০. হজরত ইদ্রিস (আ.)কে আসমানে উত্তোলন।

১১. হজরত দাউদ (আ.)কে বিশেষ সম্মানে ভূষিত। 

১২. খায়বার যুদ্ধের বিজয় অর্জন। 

১৩. মাদায়েন এবং কাদিসিয়ার যুদ্ধে বিজয় অর্জন। 

১৪. হজরত আদম (আ.)-এর জান্নাতে প্রবেশ। 

১৫. হজরত আদম (আ.) কে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছিল এবং গুনাহ মাফ করার পর তার সঙ্গী হাওয়া (আ.)- এর সাথে পনরায় সাক্ষাৎ হয়।

১৬. হজরত নূহ (আ.)কে প্লাবন ও তুফান থেকে পরিত্রাণ প্রদান দেওয়া হয় আশুরা দিনে। 

১৭. হজরত সোলায়মান (আ.) একসময় তার রাজত্ব হারিয়ে ফেলে । আবারও আশুরার দিনে তাকে তার রাজত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হয়। 

১৮. হজরত ইয়াকুব (আ.) তার হারানো পুত্র হজরত ইউসুফ (আ.)- এর সঙ্গে সাক্ষাৎ লাভ করেন।

১৯. হজরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা থেকে মদিনা শরিফে আগমন করে। যা ইতিহাসে হিযরত নামে পরিচিত। এটাও ইসলাম এর বিজয় এর জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন সিদ্বান্ত ছিল।

২০. আশুরার দিনে সবচেয়ে হৃদয়বিদারক যে ঘটনা ঘটেছিল তা হলো ইমাম হুসাইন রা. তার কিছু সহচর সহ ইয়াজিদের সৈন্য এর হাতে নির্মমভাকে শহীদ হন। 

আশুরারা রোজা কেন রাখা হয়?

অনেক অজ্ঞ মুসলিম রয়েছে। যারা মনে পরে হুসাইন রাঃ এর এর আশুরার রোজা রাখা হয়। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে মূসা আঃ এর অনুসারী সহ ফেরাউন এর হাত থেকে মুক্তির জন্য আশুরার রোজা রাখা হয়। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে বর্ননা পাওয়া যায়...

ইমাম বুখারি (রহ.) সাহাবি হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, 'মহানবী (সা.) হিজরত করে মদিনায় পৌঁছে মদিনার ইহুদিদের আশুরার দিনে রোজা পালন করতে দেখেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের জিজ্ঞেস করেন, এই দিনে কী ঘটেছে যে তোমরা এতে রোজা পালন করো? তারা বলে, এই দিনটি অনেক বড় দিন, এই দিনে আল্লাহ তাআলা মুসা (আ.) ও তাঁর সঙ্গীদের ফিরাউন থেকে মুক্ত করেছিলেন এবং ফিরাউন ও তার বাহিনীকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন। এর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ মুসা রোজা রাখতেন, তাই আমরাও আশুরার রোজা পালন করে থাকি। ইহুদিদের জবাব শুনে রাসুলে করিম (সা.) বলেন, মুসা (আ.)-এর কৃতজ্ঞতার অনুসরণে আমরা তাদের চেয়ে বেশি যত্নশীল হওয়ার অধিকারী। অতঃপর তিনি নিজেও আশুরার রোজা রাখেন এবং মুসলমানদের তা পালন করতে নির্দেশ প্রদান করেন।' (বুখারি, হাদিস : ৩৩৯৭, মুসলিম, হাদিস : ১১৩৯)

আশুরার রোজার ফজিলত?

রমজান এর রোজার পর সবচেয়ে উওম হচ্ছে আশুরার রোজা।  এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে বর্ননা রয়েছে... 

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'রমজান মাসের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা মহররম মাসে আশুরার রোজা।' (সুনানে কুবরা, হাদিস : ৮৪২১০)

আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আশুরার রোজার ফজিলত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এই রোজা বিগত বছরের গুনাহ মুছে দেয়। (মুসলিম, হাদিস : ১১৬২)

আশুরার রোজা কখন ও কত তারিখ রাখব? 

যেহেতু ইহুদিরা ১০ই মহরম রোজা রাখত। তাই হযরত মোহাম্মদ সঃ ইহুদিদের অনুসরণ না করার জন্য দুইদিন রোজা রাখতে বলেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদিস এ বলা হয়েছে... 

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, 'তোমরা আশুরার দিনে রোজা রাখো, তবে এ ক্ষেত্রে ইহুদিদের সঙ্গে মিল না হওয়ার জন্য ১০ তারিখের আগের দিন অথবা পরের দিন আরো একটি রোজা রেখে নিয়ো।' (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২১৫৪)

আশুরার দিনে যা করা যাবে না। 

আশুরার দিনে হুসাইন রাঃ এর ভালোবাসায় আবেগ আপ্লুত হয়ে কখনো নিজেকে আঘাত করা যাবে না। এতে হুসাইন রাঃ এর সম্মান বাড়বে না বা কোন কাজ এ আসবে না। আমরা হুসাইন রাঃ কে ভালোবেসে তাকে অনুসরণ করব। আল্লাহ আমাকে ও আপনাকে হুসাইন রাঃ এর নানা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব হযরত মোহাম্মদ সঃ কে অনুসরণ করার তৌফিক দান করুক। আমিন

Next Post Previous Post